শালতা নদী খনন এখন লাখো মানুষের দাবি

তালা (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা:- নদীর নাম শালতা। এক পাড়ে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কাঠবুনিয়া, আরেক পাড়ে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রাম। মাঝদিয়ে বয়ে গেছে এক সময়ের খরস্রোতা এই নদী। একাংশ বুড়িভদ্রা নদীর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে এবং অপর অংশ শিবসা নদীর সাথে। এরমধ্যে ১৬ ও ১৭/১ নম্বর পোল্ডারের আওতাধীন প্রায় ১৮ কিলোমিটার নদী একেবারেই মরে গেছে।
নদীটির কিছু অংশ মিশে হয়েছে সমতল ভূমি। আর সেখানে উঠেছে বাড়িঘরসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা। যেখানে নিচু সেখানে বাঁধদিয়ে এক শ্রেণির মানুষ করেছে চিংড়ির ঘের। যে নদী সচল রেখেছিল মানুষের জীবন, মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো, গ্রামে ছিলো প্রাণচাঞ্চল্য, সবজি মৌসুমে নদী থেকে পানি সেচ দিয়ে ফলাতো কাঁচা সবজিসহ বিভিন্ন ফসলাদী, মানুষকে দিয়েছিল কাজের সন্ধান, সেই নদী এখন লাখো মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শালতা নদী ভরাটের কারণে তালা উপজেলার খলিলনগর, তালা সদর, তেঁতুলিয়া এবং ইসলামকাটী ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের কমপক্ষে এক লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছে বলে জানালেন- স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতি এবং নদী ভরাটের জায়গা ইজারা দেওয়ার কারণে বর্তমানে শালতা ভরাট হয়ে অববাহিকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নদী ভরাট হওয়ায় তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাই শালতা নদী খনন লাখ লাখ মানুষের বাঁচার একমাত্র অবলম্বন। তবে এলাকাবাসীর দাবী, শালতা নদী খননের আগে সীমানা নির্ধারণ করা। অনেক স্থানে নদীর চিহ্নমাত্র নেই। কেউ কেউ একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে ভরাট নদীর বুকে বাড়িঘর তুলেছে, মাছের ঘের করেছে। সরকারি ম্যাপে এই নদীর চওড়া কোথাও ৪৫০ ফুট, কোথাও ৫০০ ফুট আবার কোথাও ৪০০ ফুট।
সম্প্রতি শালতা বাঁচাও কমিটির আয়োজনে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ ও পানি কমিটির সহযোগিতায় শালতা নদী পুনর্জীবনের লক্ষ্যে নদী অববাহিকার ভুক্তভোগী মানুষ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে দফায় দফায় চলছে বৈঠক। শালতা মরে যাওয়ায় এলাকায় বর্ষার ছয়মাস জলাবদ্ধতা দেখা যায়, এসময় মানুষের কোন কাজ থাকে না। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকে, মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা হুমকি হয়ে দাড়ায়। চিকিৎসা সেবায় দেখা দেয় চরম সংকট। শালতা পুনঃখনন হলে এলকার মানুষ যেমন জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাবে তেমনি কর্মসংস্থানও বাড়বে।
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ জানান, 'আমি পাঁচবার শালতা খনন নিয়ে সংসদে উত্থাপন করেছি, কিন্তু তার কোন গুরুত্ব আসেনি। কারণ শালতার যে অংশটি খনন হবে, তার বেশির ভাগ ডুমুরিয়া উপজেলার ভিতরে। তাই ওই এলাকার সাংসদকেও বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।' তিনি আরো বলেন, 'শালতা খননের জন্য ইতোমধ্যে একটি ডিও লিটার দেওয়া হয়েছে।'

মন্তব্যসমূহ