এস এম হাসান আলী বাচ্চু
: সাতক্ষীরার তালা থানার অন্তর্গত তেতুলিয়া গ্রামে রয়েছে প্রায় দেড় শত বছরের পুরাতন একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। ভিন্ন ভিন্ন নামে রয়েছে এর পরিচিতি। মিয়ার মসজিদ নামে ডাকেন স্থানীয়রা। মূল নাম খান বাহাদুর কাজী সালামতউল্লাহ জামে মসজিদ হলেও বর্তমান পরিচিতি তেতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ নামেই।
মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন তেঁতুলিয়া মসজিদ, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে মিয়ার মসজিদ নামেই পরিচিত। তবে মসজিদটির নামকরন করা হয়েছিল “খান বাহাদুর কাজী সালামতউল্লাহ জামে মসজিদ” নামে, যিনি এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন । প্রতিষ্ঠাতা জমিদার কাজী সালামতউল্লাহ মোঘল আমলে/ ১৮শতকে এই মসজিদটি নির্মান করেন, তবে নির্দিষ্ট সাল নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ১৮১৮, ১৮২৫ ও ১৮৫৮-১৮৫৯ সালে মসজিদটি নির্মান করা হয় বলে বিভিন্ন বর্ননায় এসেছে। মসজিদের খুব কাছের “সালাম মঞ্জিল” টিও সমসাময়িক কালে কাজী সাহেব প্রতিষ্ঠা করেন।
মসজিদটি খুলনা-পাইকগাছা সড়কের তেতুলিয়া গ্রামে, যা তালা থানা বাজারের ২/৩ কিলোমিটার আগে রাস্তার (সিকান্দার আবু জাফর সড়ক) পূর্ব পাশ ঘেঁষে ১ একর জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে। মসজিদের সাথেই রয়েছে বিশাল আকারের পুকুর, যার আয়তন প্রায় ২ একর।
তথ্যানুসারে মসজিদটিতে ৭ টি দরজা । প্রতিটি দরজার উচ্চতা ৯ ফুট এবংপ্রস্থ ৪ ফুট। ১০ বর্গফুট বেড় বিশিষ্ট ১২ টি পিলারের উপর মসজিদের ছাদ নির্মিত। চনসুরকি ও চিটাগুড়ের গাঁথুনিতে নির্মিত মসজিদটিতে ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ৬ টি বড় গম্বুজ ৮ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ১৪টি মিনার রয়েছে। ২৫ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট চার কোনে ৪টি মিনার। মসজিদের ভিতরে ৫টি সারিতে ৩২৫জন ও মসজিদের বাইরের চত্বরে ১৭৫ জন নামাজী একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি বাংলাদেশের সরকারের প্রতœতত্ম অধিদপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে গ্রহণ করেছে।
এই মসজিদটির সঙ্গে ১৮৪০-৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার শাহযানী বেগম মসজিদ এবং ১৮৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। অষ্টাদশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময় থেকে শেষের দিকে কাজী সালামতউল্লাহর প্রো-পিতামহ কাজী বাকাউল্লাহ খানকে যশোরের নায়েব কাজী এবং ফতেয়াবাদের (যা বর্তমানে ফরিদপুর নামে পরিচিত) কাজীর সনদ দেওয়া হয়েছিল। মসজিদের সামনে তৈরি একটা প্লেটে মন্টি সিদ্দিকী নামক লন্ডন প্রবাসী কাজী সালামতউল্লাহর বংশধর দাবি করে এই তথ্য দিয়েছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, সালামতউল্লাহ শাহী জামে মসজিদ থেকে কোয়ার্টার মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট পুরাতন শাহী জামে মসজিদটি (ভাঙ্গা মসজিদ) কাজী বাকাউল্লাহ খান বা তার অনুসারিরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একই ধরণের এক গম্বুজ বিশিষ্ট আরো একটি মসজিদ রয়েছে তালা আলিয়া মাদ্রাসার সামনে। যেটা কাজী মসজিদ নামে পরিচিত।
জনশ্রুতি রয়েছে, সালামতউল্লাহ শাহী জামে মসজিদ থেকে কোয়ার্টার মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট পুরাতন শাহী জামে মসজিদটি (ভাঙ্গা মসজিদ) কাজী বাকাউল্লাহ খান বা তার অনুসারিরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একই ধরণের এক গম্বুজ বিশিষ্ট আরো একটি মসজিদ রয়েছে তালা আলিয়া মাদ্রাসার সামনে। যেটা কাজী মসজিদ নামে পরিচিত।
এই কাঠটা মসজিদের শুরু থেকেই অক্ষত আছে বলে জানান মুয়াজ্জিন সাহেব। বর্তমানে ত্রিকোণাকৃতির ঐ কাঠের উপর মসজিদের ঘড়িটা রাখা আছে।
দেখা যাচ্ছে, একটা উপরে আরেকটা নিচে। মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব বলেন এই নিচের প্রলেপটা মসজিদ শুরুর সময়ে দেওয়া হয়, যা আজও আক্ষত আছে। ঐ প্রলেপের স্থায়িত্বের কারন হল ডিমের সাদা অংশ ঐ রঙের মূল উপাদান, বলেন মুয়াজ্জিন সাহেব। পরবর্তিতে এরশাদ সাহেবের আমলে মসজিদটি পুনরায় সংস্কার করা হয়, তখনকার সময়ে দেওয়া সাদা প্রলেপটাই ছবির উপরের সাদা অংশ।
জনশ্রুতি আছে তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশ থাকাকালীন সময়ে বিহারের এক ব্যক্তিকে মসজিদটির নকশা ও কারুকাজের জন্য প্রধান মিস্ত্রির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মসজিদটি নির্মাণ শেষ হওয়ার পর প্রধান সেই মিস্ত্রীর দুই হাত কেটে নেওয়া হয়। যেন তিনি নতুনভাবে অন্য কোনো স্থানে এই নকশা বা আকৃতির মসজিদ আর নির্মাণ করতে না পারেন। তার জন্য মিস্ত্রির পরিবারের দায়ভারও গ্রহণ করেন এই জমিদার।
আসলে এইধরনের কথা বার্তার কোন ঐতিহাসিক সত্যতা নাই, বরং মসজিদের সৌন্দর্যের বর্ননা করতেই এ ধরনের কল্পকাহিনীর জন্ম হয়েছে।
মসজিদের বারান্দায় একবারে পূর্ব কোণে একটা সিঁড়ি রয়েছে এবং এর মাথায় রয়েছে ছোট একটি চৌকণাকৃতির জায়গা। মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব জানান এই স্থানটিতে উঠে আযান দেওয়া হত, যখন মাইকের চল ছিলনা। মাইক আসার পর আযানের সেই পদ্ধতি আর নেই। বর্তমানে সেই স্থানটিতে মাইক বসানো হয়েছে।
বর্তমানে অযত্ন আর অবহেলায় ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির সৌন্দর্য নষ্ট হতে বসেছে। ৭টি মিনার ভেঙে পড়ার উপক্রম। মসজিদের বাউন্ডারি এলাকায় বহু অজানা ব্যক্তিদের কবরের চিহ্ন থাকলেও সেগুলো অরক্ষিত। মসজিদটির ফ্লোরে ও পশ্চিম পাশের দেয়ালের উপরের অংশে ফাটল ধরেছে। যদি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয় তবে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্বাক্ষী তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ (মিয়ার মসজিদটি) কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে।
: সাতক্ষীরার তালা থানার অন্তর্গত তেতুলিয়া গ্রামে রয়েছে প্রায় দেড় শত বছরের পুরাতন একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। ভিন্ন ভিন্ন নামে রয়েছে এর পরিচিতি। মিয়ার মসজিদ নামে ডাকেন স্থানীয়রা। মূল নাম খান বাহাদুর কাজী সালামতউল্লাহ জামে মসজিদ হলেও বর্তমান পরিচিতি তেতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ নামেই।
মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন তেঁতুলিয়া মসজিদ, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে মিয়ার মসজিদ নামেই পরিচিত। তবে মসজিদটির নামকরন করা হয়েছিল “খান বাহাদুর কাজী সালামতউল্লাহ জামে মসজিদ” নামে, যিনি এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন । প্রতিষ্ঠাতা জমিদার কাজী সালামতউল্লাহ মোঘল আমলে/ ১৮শতকে এই মসজিদটি নির্মান করেন, তবে নির্দিষ্ট সাল নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ১৮১৮, ১৮২৫ ও ১৮৫৮-১৮৫৯ সালে মসজিদটি নির্মান করা হয় বলে বিভিন্ন বর্ননায় এসেছে। মসজিদের খুব কাছের “সালাম মঞ্জিল” টিও সমসাময়িক কালে কাজী সাহেব প্রতিষ্ঠা করেন।
মসজিদটি খুলনা-পাইকগাছা সড়কের তেতুলিয়া গ্রামে, যা তালা থানা বাজারের ২/৩ কিলোমিটার আগে রাস্তার (সিকান্দার আবু জাফর সড়ক) পূর্ব পাশ ঘেঁষে ১ একর জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে। মসজিদের সাথেই রয়েছে বিশাল আকারের পুকুর, যার আয়তন প্রায় ২ একর।
তথ্যানুসারে মসজিদটিতে ৭ টি দরজা । প্রতিটি দরজার উচ্চতা ৯ ফুট এবংপ্রস্থ ৪ ফুট। ১০ বর্গফুট বেড় বিশিষ্ট ১২ টি পিলারের উপর মসজিদের ছাদ নির্মিত। চনসুরকি ও চিটাগুড়ের গাঁথুনিতে নির্মিত মসজিদটিতে ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ৬ টি বড় গম্বুজ ৮ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ১৪টি মিনার রয়েছে। ২৫ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট চার কোনে ৪টি মিনার। মসজিদের ভিতরে ৫টি সারিতে ৩২৫জন ও মসজিদের বাইরের চত্বরে ১৭৫ জন নামাজী একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি বাংলাদেশের সরকারের প্রতœতত্ম অধিদপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে গ্রহণ করেছে।
এই মসজিদটির সঙ্গে ১৮৪০-৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার শাহযানী বেগম মসজিদ এবং ১৮৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। অষ্টাদশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময় থেকে শেষের দিকে কাজী সালামতউল্লাহর প্রো-পিতামহ কাজী বাকাউল্লাহ খানকে যশোরের নায়েব কাজী এবং ফতেয়াবাদের (যা বর্তমানে ফরিদপুর নামে পরিচিত) কাজীর সনদ দেওয়া হয়েছিল। মসজিদের সামনে তৈরি একটা প্লেটে মন্টি সিদ্দিকী নামক লন্ডন প্রবাসী কাজী সালামতউল্লাহর বংশধর দাবি করে এই তথ্য দিয়েছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, সালামতউল্লাহ শাহী জামে মসজিদ থেকে কোয়ার্টার মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট পুরাতন শাহী জামে মসজিদটি (ভাঙ্গা মসজিদ) কাজী বাকাউল্লাহ খান বা তার অনুসারিরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একই ধরণের এক গম্বুজ বিশিষ্ট আরো একটি মসজিদ রয়েছে তালা আলিয়া মাদ্রাসার সামনে। যেটা কাজী মসজিদ নামে পরিচিত।
জনশ্রুতি রয়েছে, সালামতউল্লাহ শাহী জামে মসজিদ থেকে কোয়ার্টার মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট পুরাতন শাহী জামে মসজিদটি (ভাঙ্গা মসজিদ) কাজী বাকাউল্লাহ খান বা তার অনুসারিরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একই ধরণের এক গম্বুজ বিশিষ্ট আরো একটি মসজিদ রয়েছে তালা আলিয়া মাদ্রাসার সামনে। যেটা কাজী মসজিদ নামে পরিচিত।
এই কাঠটা মসজিদের শুরু থেকেই অক্ষত আছে বলে জানান মুয়াজ্জিন সাহেব। বর্তমানে ত্রিকোণাকৃতির ঐ কাঠের উপর মসজিদের ঘড়িটা রাখা আছে।
দেখা যাচ্ছে, একটা উপরে আরেকটা নিচে। মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব বলেন এই নিচের প্রলেপটা মসজিদ শুরুর সময়ে দেওয়া হয়, যা আজও আক্ষত আছে। ঐ প্রলেপের স্থায়িত্বের কারন হল ডিমের সাদা অংশ ঐ রঙের মূল উপাদান, বলেন মুয়াজ্জিন সাহেব। পরবর্তিতে এরশাদ সাহেবের আমলে মসজিদটি পুনরায় সংস্কার করা হয়, তখনকার সময়ে দেওয়া সাদা প্রলেপটাই ছবির উপরের সাদা অংশ।
জনশ্রুতি আছে তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশ থাকাকালীন সময়ে বিহারের এক ব্যক্তিকে মসজিদটির নকশা ও কারুকাজের জন্য প্রধান মিস্ত্রির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মসজিদটি নির্মাণ শেষ হওয়ার পর প্রধান সেই মিস্ত্রীর দুই হাত কেটে নেওয়া হয়। যেন তিনি নতুনভাবে অন্য কোনো স্থানে এই নকশা বা আকৃতির মসজিদ আর নির্মাণ করতে না পারেন। তার জন্য মিস্ত্রির পরিবারের দায়ভারও গ্রহণ করেন এই জমিদার।
আসলে এইধরনের কথা বার্তার কোন ঐতিহাসিক সত্যতা নাই, বরং মসজিদের সৌন্দর্যের বর্ননা করতেই এ ধরনের কল্পকাহিনীর জন্ম হয়েছে।
মসজিদের বারান্দায় একবারে পূর্ব কোণে একটা সিঁড়ি রয়েছে এবং এর মাথায় রয়েছে ছোট একটি চৌকণাকৃতির জায়গা। মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব জানান এই স্থানটিতে উঠে আযান দেওয়া হত, যখন মাইকের চল ছিলনা। মাইক আসার পর আযানের সেই পদ্ধতি আর নেই। বর্তমানে সেই স্থানটিতে মাইক বসানো হয়েছে।
বর্তমানে অযত্ন আর অবহেলায় ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির সৌন্দর্য নষ্ট হতে বসেছে। ৭টি মিনার ভেঙে পড়ার উপক্রম। মসজিদের বাউন্ডারি এলাকায় বহু অজানা ব্যক্তিদের কবরের চিহ্ন থাকলেও সেগুলো অরক্ষিত। মসজিদটির ফ্লোরে ও পশ্চিম পাশের দেয়ালের উপরের অংশে ফাটল ধরেছে। যদি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয় তবে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্বাক্ষী তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ (মিয়ার মসজিদটি) কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে।

মন্তব্যসমূহ