বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচনার শির্ষে শেখ হাসিনা

নিউজ ডেস্ক :-
আর কদিন পরই বিদায় নেবে ২০১৭ সাল। আসবে নতুন বছর। নতুন বছরের সামনে দাঁড়িয়ে পুরোনো বছরটাকে মূল্যায়নের দৃষ্টিতে দেখেন অনেকে। বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা বছরটিতে বিশ্বজুড়ে নানা আলোচিত ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নায়ক বা খলনায়ক হয়ে ছিলেন অনেক রাজনীতিবিদ। ২০১৭ সালে বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচিত কয়েকজনকে নিয়েই এ আয়োজন:
শেখ হাসিনা
বিদায়ী বছরে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বছরের শুরু থেকে জঙ্গিবাদ দমনে সরকারে নীতি যেমন বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়, তেমনি এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অঙ্গীকার রক্ষাও প্রশংসা পায় বিশ্বব্যাপী। তবে প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে আলোচিত হন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব বিবেকের প্রতিমূর্ত হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করে। ভারতসহ অনেক দেশেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া থেকে বিরত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ একরকম সীমান্ত খুলে দেয়। ১০ লাখ নিপীড়িত রোহিঙ্গার আশ্রয় হয় বাংলাদেশে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, যদি ১৬ কোটি মানুষের খাবার দিতে পারি তবে আরও ১০ লাখের খাবারের অভাব হবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই মানবতাবোধের জন্য ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধি পান। চলতি বছরের শেষভাগে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গেলে বিশ্বমিডিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শেখ হাসিনা। ট্রাম্প, ম্যাখোঁ সবাইকে ছাপিয়ে বিশ্ব মিডিয়াগুলো শেখ হাসিনার কথা শোনার জন্যই মুখর ছিল। প্রধানমন্ত্রীও তাঁর বক্তব্য ও সাক্ষাৎকারে বিশ্ববাসীকে মানবতার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
অ্যাঙ্গেলা মেরকেল
বিশ্ব মানবতার আরেক প্রতিমূর্ত অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে আসা অভিবাসন প্রত্যার্শীদের জার্মানিতে আশ্রয় দেওয়ার আঙ্গীকার অটুট রাখায় সচেষ্ট ছিলেন মেরকের। এজন্য অবশ্য তাঁকে চড়া মূল্যও দিতে হয়েছে। সর্বশেষ জার্মানির নির্বাচনে সিট কমেছে তাঁর। জনপ্রিয়তা হারিয়েও মেরকেল নিজেল অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত হননি। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) শক্তিশালী রাখায় বড় ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি।
শি জিনপিং
একাধারে চীনের প্রেসিডেন্ট, রাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান, কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার মহাসচিব এবং কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান শি জিনপিং। শি জিনপিং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান এবং রাজনৈতিক ও বাজার অর্থনীতির সংস্কার প্রসঙ্গে খোলামেলা নীতির জন্য খ্যাত। চলতি বছর অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় দলের পঞ্চম প্রজন্মের অন্যতম নেতা হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে। কমিউনিস্ট পার্টির সংবিধান হিসেবে চীনে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন হয় তাঁর হাতে। আর মাও সেতুংয়ের পর ওই মর্যাদার নেতা হিসেবে গণ্য হচ্ছেন শি জিনপিং।
ডোনাল্ড ট্রাম্প
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত, সমালোচিত, নিন্দিত ব্যক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বছরের আলোচিত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হয়ে এবছরও নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছেন প্রতিনিয়ত। মুসলিম নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে বাঁধা মার্কিন আদালতে আটকে গেলেও বছরের শেষ দিকে ট্রাম্পই জয় পান। এশিয়া সফরে এসে আলোচিত হয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এছাড়া বছরের শেষে বিশ্বকে একরকম বিক্ষুব্ধ করে দিয়েছেন জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে। এরপর থেকে বিশ্বজুড়ে এর বিরেুদ্ধে তীব্র আন্দোলন হয়েছে। আর মার্কিন ওই স্বীকৃতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে আনা প্রস্তাবে লজ্জাজনক কূটনৈতিক পরাজয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
কিম জং উন
যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন রাষ্ট্র বা জোটের নিষেধাজ্ঞা, হুমকি উপেক্ষা করেই একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে একরকম বৃদ্ধাগুলি প্রদর্শন করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। বিদায়ী বছরের প্রথম অংশ জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এর মাধ্যম ছিল গণমাধ্যম। বছরে কয়েক ধাপে বিগড়ে যাওয়া উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। তবে বছর শেষে জাতিসংঘের নতুন নিষেধাজ্ঞায় সোচ্চার হয় উত্তর কোরিয়া ও কিম জং উন। এই নিষেধাজ্ঞাকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে দাবি করেছেন এই নেতা।
থেরেসা মে
বেক্সিট ইস্যুকে কেন্দ্র করেই বিতর্কে ডেভিড ক্যামেরন বিদায় নিলে মঞ্চে উদয় হয়েছিলেন ব্রিটিশ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তবে গত বছর যেমন ওই ইস্যুর সমাধান হয়নি, এ বছরও না। বছর জুড়েই ব্রেক্সিট আলোচনায় যেমন থেমেরা মে সংবাদ মাধ্যমে এসেছেন, তেমনি আলোচনায় এসেছেন মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও। মন্ত্রিসভা থেকে কয়েকজনের বিদায় হয়েছে। এসব বিতর্কের পর ব্রেক্সিট আসলে কবে হবে এ নিয়ে প্রশ্ন করাই একরকম ভুলে যাচ্ছে ব্রিটিশরা।
ইমান্যুয়েল ম্যাখোঁ
বছরের শুরুতে উত্থান হয় এই ফরাসি নেতার। অটলান্টিকের ওপারে যখন ট্রাম্পের আবির্ভাব তখন এবারে আশা দেখান এই তরুণ নেতা। ইউরোপের আশার প্রদীপ হয়ে বছরজুড়েই থেকেছেন গণমাধ্যমের প্রথম পাতায়। ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে যখন ডানপন্থীদের উত্থান তখন মধ্যপন্থী এই নেতার জয়ে ফরাসিদের মতোই স্বস্তি পেয়েছে বিশ্বব্যাপী। অবশ্য বিশ্বব্যাপী এমন আশাকে নিরাশ করেননি ম্যাখোঁ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক ইস্যু থেকে জলবায়ু প্রতিটি ক্ষেত্রেই সোচ্চার ছিলেন এই ফরাসি নেতা।
প্রিন্স সালমান
সৌদি আরবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আলোচনায় আসেন সৌদি প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান। বাবা বাদশাহ হওয়ার পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব শুরু করেন তিনি। তারপর সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে শুরু হয় সামরিক অভিযান হলে সৌদি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। মুহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ও সৌদি আরবের অর্থনীতি এবং উন্নয়নবিষয়ক কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও দেওয়া হয়। সালমান ২০৩০ সালকে লক্ষ্য করে সৌদি আরবের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। এতে দেশটির রাজ পরিবারের ব্যবসায় ধস নেমেছে। সালমানের নেওয়া পদক্ষেপেই রাজপরিবার ঘনিষ্ঠ অনেকে দুর্নীতি অভিযোগে বন্দী হয়েছে। রাজপরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক নেতারাই দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে।
রবার্ট মুগাবে
কেউ কী কখনো ভেবেছিল জিম্বায়ুরের রাষ্ট্রপতি পদ থেকে রবার্ট মুগাবেকে সরে যেতে হবে। দেশটির প্রবাদতুল্য নেতাকে স্ত্রী গ্রেস মুগাবেরর কারণেই ক্ষমতা থেকে সরতে হলো। বছরের শেষভাবে রবার্ট মুগাবের কিছু স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের কারণেই রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় জিম্বাবুয়েতে। ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। আর মুগাবেকে সরিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়েছেন এমারসন এমনানগাগওয়া।
রবার্ট মুলার
রবার্ট মুলার দীর্ঘ ১২ বছর ধরে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মার্কিন নির্বাচনে কথিত রুশ হস্তক্ষেপের তদন্তভার রবার্ট মুলারের ওপর পড়েছে। এর আগে এই তদন্তে থাকা জেমস কোমিকে বরখাস্ত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের মতো স্পর্শকাতর বিষয় কাজ করায় আলোচিত ববার্ট মুলার। অবশ্য বছরের শেষদিকে জেমস কোমির মতোই তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মুলার অনৈতিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলেই অভিযোগ। এখন দেখা যাক তাঁর ভাগ্যে কী ঘটে।

মন্তব্যসমূহ