পাইকগাছায় ভরা মৌসুমে খেজুর রসের তীব্র সংকট : বিলুপ্তির পথে এলাকার খেজুর গাছ !

শেখ দীন মাহমুদ :-
ব্যাপক নিধন যজ্ঞ ও যথাযথ পরিচর্যার অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছার ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর গাছ। ইট ও টালী ভাটায় অন্যতম প্রধান জ্বালানী হিসেবে খেজুর গাছ সরবরাহে গত কয়েক বছরে আশংকাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে খেঁজুর গাছ। এক সময় শীতের সকালে খেঁজুরের মিষ্টি রস ও পীঠা,সন্ধ্যায় রসের পায়েশ ছাড়া যেন জমতইনা। প্রত্যুষে গাছির দল বেরিয়ে পড়ত রস পাড়তে,আর ফিরত কাঁধে ভর্তি রসের ঠিলা,ভাঁড় বা কলস নিয়ে। রস সংগ্রহে গাছির দল শীতের আগমনকে আগাম স্মরণ করিয়ে দিতেন। আর আজ যেন তাদের দেখা মেলাভার। আশংকাজনকহারে গাছ নিধনে ভাটা পড়েছে সংশ্লিষ্টদের কর্মতৎপরতায়। অনেকেই পেশা বদল করে চলে গেছেন ভিন্ন পেশায়। সকালে গাছিরা রস সংগ্রহ করে আনার পর গাছিনী বা তাদের গৃহিনীরা তা প্রক্রিয়া করণ গুড়,পাটালি,পায়েস,পিঠা তৈরীতে ব্যস্ত থাকতেন। আর আজ যেন চির চেনা গ্রামের সেসব অচেনা এক ইতিহাস।
জানা গেছে,জনসংখ্যার অস্বাভাবিক আধিক্য’র ফলে তাদের বাড়তি ঘর-বাড়ি তৈরীতে ও আধুনিক সভ্যতার সাথে পাল্লা দিয়ে নগরায়নে ইটের যোগান মেটাতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ইট ও টালীর ভাটা। দামে কম ও জ্বালাণী হিসেবে ভাল হওয়ায় ইট ভাটা মৌসুমে ব্যাপকহারে নিধন হচ্ছে খেঁজুর গাছ। ইট ভাটায় জ্বালাণী হিসেবে কাঠের ব্যবহার সম্পূর্ণ অবৈধ হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভাটা মালিকরা অবাধে বিভিন্ন কাঠের সাথে ব্যবহার করছে খেঁজুর গাছ। লোনা পানির জনপদে কৃষি ও কৃষকদের আর্থিক দূর্বলতার সুযোগে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে নিধন হচ্ছে মিষ্টি রসের ভান্ডার খেঁজুর গাছ। কোন কোন এলাকায় কিছু গাছের অস্থিত্ব থাকলেও গাছির অভাবে নিদারুণ অবহেলা আর অযতেœ তাও এক সময় চলে যাচ্ছে শেষ ঠিকানায়।
উপজেলার যেসকল এলাকায় এখনো কিছু খেঁজুর গাছ দৃশ্যমান আছে সেসব এলাকায় নিতান্তই শখের বসে অথবা নকল গুড়ের কারখানায় আসল গুড়ের যোগান মেটাতে ব্যস্ত থাকেন গাছিরা। ১০/১৫ টাকা ভাঁড়/ঠিলা প্রতি রসের দাম এখন ঠেকেছে ৭০/১০০ টাকায়। ১৫ টাকা কেজি প্রতি গুড় বা পাটালি বিক্রি হয় ১৫০/২০০ টাকায়। তাও আবার আসল গুড় পেতে অপেক্ষা করতে হয় গাছিদের বাড়ি। যে গাছের সাথে শীতের ছিল অপূর্ব যোগসূত্র। আর আজ মৌসুমের সর্ব নি¤œ তাপ মাত্রার সকালেও দেখা মিলছেনা মিষ্টি রসের। অতীতে গ্রামের যেসব গৃহিনী বা গাছিনীদের খেঁজুরের রস প্রক্রিয়া করণে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত তারাও আজ পার করেন অলস সকাল সময়।
সচেতন এলাকাবাসীর ধারণা,এমনটা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে গ্রম-বাংলা থেকে চির তরে হারিয়ে যাবে নলেন গুড়,ঝোলা গুড়,দানা গুড়,পাটালী গুড়,নলেন সন্দেশ,রসের পায়েস ও পিঠা-পুলি। এক কথায় পাইকগাছার শীতের প্রকৃতি থেকে একবারে হারিয়ে যাবে খেজুরের মিষ্টি রস।

মন্তব্যসমূহ